আরশোলাকে চিরতরে নির্মূল করার উপায়
আরশোলা , তেলাপোকা বা যাকে আমরা জানি cockroach নামে।
খুবই বিরক্তিকর, যন্ত্রণাদায়ক এক পোকার নাম।
আরশোলা নেই এমন বাড়ি একটিও খুঁজে পাবেন না।
প্রতিটি মানুষকে এই আরশোলা বা তেলাপোকার যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
আরশোলা শুধু বিরক্তিকর নয়, এটি স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।
এটি খুবই নোংরা একটি পোকা যা আমাদের রান্নাঘরের জিনিসপত্রে হেঁটে বেড়ায় এবং বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণু বহন করে এবং খাবারে সেগুলো ছড়িয়ে মানব দেহের ক্ষতি করে।
যখন এটা খাবারের মধ্যে আসে তখন লালার মাধ্যমে এক ধনের অনুজীব ছড়ায়, আর এই জীবাণু থেকে সৃষ্টি হয়ে নানা রোগের।
বাজারে নানা প্রকার cockroach মারার রাসায়নিক কীটনাশক স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে সাইফ্লুথ্রিন (sai-flu-thrin), যা তেলাপোকা মারার খুব ভালো পদ্ধতি।
কিন্তু তা সত্ত্বেও দেখা যাই এদের উৎপাত কমে না।
এদের নির্মূল করাটা যে বেশ দুরূহ তা বিজ্ঞানীরাও স্বীকার করেন।
এমনকি বলা হয়ে থাকে তারা পারমাণবিক বিস্ফোরণের মাঝেও টিকে যাবে বহাল তবিয়তে।
চিন্তা করে দেখুন তো, এত যে স্প্রে করে করে আরশোলা মারছেন তার পরেও এত আরশোলা আসছে কোথা থেকে ?
একটা আরশোলা একবারে ৪০-৫০ টা করে ডিম দিতে পারে।
একটা আরশোলা মরলে আরো ৪০-৫০ টা তার জায়গা পূরণ করবে।
এমন ব্যবস্থা করতে হবে যে বড় আরশোলার পাশাপাশি বাচ্চাগুলোও মারা পড়ে।
এই বাজারজাত ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করার চেয়ে আপনি বাড়িতেই খুব সহজে বানাতে পারেন আরশোলা মারার ওষুধ এবং তাও আবার খুব কম খরচে।
খুব ছোট কয়েকটি কাজ করে আপনি চিরদিনের জন্য আরশোলার হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন, যেখানে বড় আরশোলার পাশাপাশি তাদের বাচ্চাও মারা পড়বে।
আসুন জেনে নিই সেই ম্যাজিক্যাল উপায়টি।
বোরিক অ্যাসিড, আটা ও চিনি
সমপরিমানে বোরিক অ্যাসিড পাউডার, আটা ও চিনি মিশিয়ে একটি পাউডার তৈরী করুন।
এবার সেই পাউডারটিকে যে স্থানে আরশোলার চলা ফেরা আছে সেইখানে খুব হালকা ভাবে ছড়িয়ে দিন।
চিনি আরশোলাকে আকর্ষিত করবে আর আটার মধ্যে বোরিক অ্যাসিড লেগে থাকবে যা আরশোলার গায়ে, মুখে, পায়ে ও শুঁড়ে লেগে যাবে।
Pic: Boric Acid Powder |
আর এই ভাবে সে বোরিক এসিডিটি বয়ে নিয়ে যাবে নিজের আস্তানায় তার বাচ্চাদের কাছে এবং বাচ্চারাও সেই বোরিক এসিডের সংযোগপর্শে আসবে।
বোরিক এসিডকে কে বলা হয় organic cockroach killer.
যা পতঙ্গের জন্য ভয়ঙ্কর হলেও মানব দেহের জন্য নয়।
বোরিক অ্যাসিড খাবার ফলে পতঙ্গদের নার্ভাস সিস্টেম অকোজো হয়ে পড়ে যার ফলে সেটি মারা যাই।
দুটো জিনিস এই ক্ষেত্রে কিন্তু মনে রাখতে হবে
১. পাউডারটি খুব হালকা ভাবে ছড়াতে হবে,বেশি মোটা পরত করে ছড়ালে কিন্তু আরশোলা আসবে না।
২. বোরিক অ্যাসিড শুকনো অবস্থাতেই সবচেয়ে কার্যকরী।
বেকিং সোডা পেস্ট
বেকিং সোডা ঘরোয়া অনেক কাজে ব্যবহৃত হয় এবং এটা তেমনি আরেক ব্যবহার।
সমপরিমাণ বেকিং সোডা, চিনি এবং জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং বাড়ির আনাচে কানাচে প্রয়োগ করুন।
বোরিক এসিড পেস্টের মতই একই উপকার পাবেন।
তবে সাধারণ রাসায়নিক স্প্রে এর মত দ্রুত কাজ করবে না।
একটু ধীরেসুস্থে কাজ করলেও অনেক লাভ হবে।
বেকিং সোডা ও বেকিং পাউডারের মূল উপাদান একই, সোডিয়াম বাই কার্বনেট।
Pic: Baking Soda |
তবে বেকিং পাউডারে আরও কিছু পদার্থ মেশানো হয়ে থাকে।
খুব সহজ ভাবে বললে বেকিং পাউডারের চাইতে বেকিং সোডা বেশি সক্রিয় বা কার্যকরী।
বেকিং পাউডার দিয়েও এই বিষ তৈরি করা যাবে।
তবে প্রয়োগ করতে হবে বারবার, আর একটু দীর্ঘ সময় লাগবে কাজ হতে।
বেকিং সোডার মধ্যে থাকে সোডিয়াম বাই কার্বনেট।
এই সোডিয়াম বাই কার্বনেট আরশোলার স্টোমাকে থাকা এসিডের সাথে রিঅ্যাকশন ঘটিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরী করে যার ফলে তাদের স্টমাক গ্যাসের চাপে ফেটে যায়।
যার ফলে আরশোলা গুলির মৃত্যু ঘটে। অন্য আরশোলা এই মৃতদেহ খাবার ফলে বেকিং সোডা অর্থাৎ সোডিয়াম বাই কার্বনেট তাদের পেটে গিয়েও একই কাজ করে।
ডায়াটোমেসিয়াস আর্থ
এই পাউডার টি যখন আরশোলা বা তেলাপোকার গায়ে লেগে যাই তখন আরশোলার গায়ে বা exoskeleton এর উপর আদ্রতা ধরে রাখার যে তেলতেলে মোমের মতো প্রলেপ থাকে সেটিকে মুছে দিয়ে নষ্ট করে দেয়।
যার ফলে এই সব জাতীয় কীট-পতঙ্গ শুকিয়ে মারা যাই।
কারণ এই Diatomaceous earth পাউডারের মধ্যে থাকে crystalline silicon dioxide, এবং খুবই Low density প্রোডাক্ট হওয়ার জন্য এটির মধ্যে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র বা pores থাকে যার ফলে এই পাউডার আদ্রতা শুষে নেয়।
Pic: Diatomaceous Earth Powder |
বহু পেস্ট কন্ট্রোল সংস্থা এটির ব্যবহার করে থাকে।
যে জায়গায় আরশোলা বা তেলাপোকার আনাগোনা আছে সেখানে পাতলা করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
আরশোলা এই জায়গা দিয়ে হাঁটলে গায়ে লেগে যাবে এই পাউডারটি।
সাবান জল
আরশোলা মারতে এটি একটি সহজ ঘরোয়া উপায়।
একটি স্প্রে বোতলে গরম জল আর ডিশ ওয়াশিং লিকুইড নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
এরপর যখনি আরশোলা বা তেলাপোকা দেখবেন , মিশ্রণটি ওই কীটদের গায়ে স্প্রে করে দিন।
দেখবেন আরশোলা মারা পড়বে।
এখন ভাবছেন এও কি সম্ভব?
তাহলে বলি এটাও সম্ভব কারণ আরশোলা বা এই জাতীয় কীটপতঙ্গ তাদের শরীরের উপর মাইক্রো টিউবের মাধ্যমে শ্বাস নেয়।
সাবান জল স্প্রে করলে সেটি তাদের শরীরের উপর একটা পাতলা আস্তরণ ফেলে দেয় যার ফলে আরশোলা দমবন্ধ হয়ে বা suffocation য়ে মারা পড়ে।
অন্যান আর্টিকেল
প্লাস্টিকের পাত্রের গন্ধ ও দাগ দূর করার টিপস
0 Comments