আমরা যখন স্বপ্নের বাড়ি বানাই, তখন আমাদের অন্যতম চিন্তার বিষয় থাকে যে আমরা কি রং করব বাড়ির। কোন ঘরের ভিতরের দেয়ালের রং কি হবে। বাড়িতে রং করার আগে বাড়ির সদস্যদের মধ্যে অনেক আলোচনা হয় এই রং পছন্দ করা নিয়ে।
কোন রং বাড়ির কোন দেওয়ালে মানাবে?
দেয়ালের রং কি হলে ঘরের সৌন্দর্য বাড়বে?
এই সব নিয়ে বেশ আলোচনা হয়।
ঘর রং করাকে আমরা খুব সাধারণ একটি বিষয় হিসেবে দেখি। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যায়, সব ঘরের দেয়ালের রং একই।
আর আলাদা রং করা হলেও আমরা সেই ক্ষেত্রে শুধু বিবেচনা করি, দেখতে ভাল লাগছে কিনা।
কিন্তু জানেন কি , যে বিভিন্ন রঙের আলাদা আলাদা গুণ রয়েছে।
সাইকোলোজিসরা বলছেন,রং শুধু চোখের সৌন্দর্য্যের কারণ নয়। ঘরের রং আপনার মনে এনে দিতে পারে শান্তি, ও সাথে প্রভাব ফেলতে পারে আপনার এবং আপনার পরিবারের মানসিক অবস্থার উপর।
ঘরের ভিতরের দেয়ালের রং কি করবেন ?
লিভিং রুম-
লিভিং রুমের জন্য উষ্ণ রং যেমন লাল, হলুদ এবং কমলা রং ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও আর্থ টোন কালার যেমন বাদামী, ধূসর রং মানুষকে আকৃষ্ট করে বসে কিছুক্ষণ গল্প করবার জন্য।
রান্নাঘর-
রং বিশেষজ্ঞরা জানান, রান্নাঘরে জন্য লাল এবং হলুদ একেবারে উপযুক্ত রং। তবে আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে এসব রং এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। কারণ, এই রংগুলো ক্ষুধা বাড়ায়।
এজন্যই বেশীরভাগ রেস্টুরেন্টের দেয়ালে এই রং গুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।
সেই ক্ষেত্রে আপনাকে ডায়েটে সাহায্য করবে নীল রং। সম্ভব হলে রান্নাঘরে প্লাষ্টিক পেইন্ট বা প্লাস্টিক ইমালশন ব্যবহার করবেন, তাতে তেলচিটচিটে ময়লা হলে সহজে ওঠানো যাবে ।
ডাইনিং রুম-
ডাইনিং রুমের দেওয়ালের রং যদি লাল রঙের করে থাকেন, তাহলে জেনে নিন এর গুরুত্ব। লাল রঙ উদ্যম, ক্ষমতা, প্রভাব ইত্যাদির প্রতীক।
যাঁরা সার্জেন, দন্ত বিষয়ক চিকিৎসক, কেমিস্ট , ইলেকট্রিকের কাজের সঙ্গে যুক্ত, বা অধ্যাপক, তাঁদের জন্য় লাল রঙের দেওয়াল ইতিবাচক।
স্টাডি রুম-
পড়ার ঘরের রং গাঢ় হলে মনসংযোগে অসুবিধা হয়। তাই রং যত হালকা হবে একাগ্রতা ততই বাড়বে আপনার। রিল্যাক্সও করতে পারবেন। সেই কারণে স্টাডি রুমের রং সাদা , হালকা নীল , হালকা সবুজ, ক্রিম এই ঘরের জন্য আদর্শ।
শোবার ঘর-
আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতেই যেন আমরা প্রবেশ করি এই ঘরে। বিশ্রামের জন্য আমরা এ ঘরকে বেছে নিই। তাই ঘরটি হওয়া চাই ঠান্ডা, শীতল।
এই ঠান্ডা শীতল আমেজ পেতে ব্যবহার করুন হোয়াইট, অফ হোয়াইট, লাইট ভায়োলেট, গ্রিন, লেমন ইয়েলো, ফ্রেঞ্চ গ্রে, ক্রিম- এইসব শীতল রং দেওয়া যায়।।
রং বিশেষজ্ঞদের মতে ,এই রংগুলো মনে শান্তির প্রভাব ফেলে। রং যত গাঢ় হবে তত আপনার শান্তি অনুভব হবে। তবে সবার ঘরের রং নীল বা নীল ঘেঁষা কোনো রং হলে সবথেকে ভালো ৷
বাথরুম-
বাথরুম বা শৌচাগারের জন্য সাদাই ভাল সবথেকে ভালো । এখনকার ব্যাস্ততার দিনে বাথরুম আর শুধু স্নান করার জায়গা নয়। বরং সেখানে বেশ কিছুটা সময় আপনি একান্তে কাটান ।
বাথরুমে যারা স্পা (Spa) করেন, নিজেকে রিল্যাক্স করেন, সেই বাথরুমের জায়গা যদি পরিষ্কার পরিছন্ন হয় তাহলে মনটাও উৎফুল্ল থাকে।
সাদা বা এই সব রং গুলি পরিচ্ছন্নতার অনুভূতি দেয়। তাই সাদা,অফ ওয়াইট, টারকুইশ নীল, লাইট পিঙ্ক, লাইট স্কাই কালার এই রং গুলো ব্যবহার করতে পারেন।
হোম অফিস-
বাড়িতেই যদি আপনার অফিস ঘর হয় তাহলে ব্যবহার করুন উজ্জ্বল সাদা বা ক্রিম রং। এই রং আপনার মধ্যে কাজের উপর মনোসংযোগ বাড়াবে।
গেস্ট রুম-
গেস্ট রাম কিন্তু আপনার রুচির পরিচয় বাহন করে । যে ঘরে অথিতিদের রাখবেন সেখানে হালকা টোনের কালার আদর্শ।এর জন্য আপনি ক্যারামেল, কফি বা ক্রিম রং করুন এই ঘরে।
আর লাইট সিস্টেম করার সময় খেয়াল রাখবেন , আলো যেনো চারিদিকে ভালোভাবে ছড়ায়। অতিথিরা ফিরে যাবার সময় আপনার সম্বন্ধে একটা পজিটিভ মনোভাব নিয়ে যাবে।
YouTube Video: ঘরের ভিতরের দেয়ালের রং
এতো গেলো বাড়ির ভিতরের দেয়ালের রং আপনি কি করবেন। বাড়ির ভিতরের দেয়ালের রং করবেন অথচ বাইরের দেয়ালের রং করবেন না , তাই কি হয় ?
কারণ পথচলতি মানুষজনের প্রথমেই আপনার বাড়ির বাইরের দেয়াল নজরে আসবে। তাহলে চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক যে বাড়ির বাইরের রং কি করানো উচিত ?
বাড়ির বাইরের রঙ-
বাড়ির বাইরের রঙ হতে হবে সেটি মালিকের মতের উপর ভিত্তি করে ৷ খেয়াল করে দেখবেন অনেকে বাড়ির বাইরের রং উজ্জ্বল কোনও রঙে রঙিয়ে তোলেন , তেমনি অনেকে সাদা বা হলকা জাতীয় কোনও রংই পছন্দ করেন বাইরের অংশকে সুন্দর করে তুলতে।
পুরো বাড়ির বাইরের দিকটা রং করাতে চাইলে আশপাশের পরিবেশটা বুঝে নিয়ে রং বাছাই করতে পারেন। পুরো বাড়িতে হালকা কোনো রং ব্যবহার করে বর্ডারে দিতে পারেন গাঢ় রং।
বিশেষজ্ঞদের মতে বাড়ির বাইরে হালকা হলুদ, হালকা বেগুনী ,সাদা অথবা হলকা কমলা রং করা উচিত।
রং সংক্রান্ত কয়েকটি টিপস-
১. আপনার রুমের আয়তন যদি ছোট হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই হালকা যে কোন রং করতে পারেন। এতে আপনার রুম বড় দেখাবে। আর যদি গাড় রং ভালবেসে থাকেন, তাহলে দিতে পারেন। কিন্তু বেশি গাঢ় করা ঠিক হবেনা। এতে আপনার রুম আরও বেশি ছোট দেখাবে এবং অন্ধকার লাগবে।
২. আপনার রুমের যে কোন একটি দেয়ালও আপনি রং করতে পারেন। রুমের যেকোন একটি দেয়াল বেছে নিন যেখানে আসবাবপত্র না রাখলেও চলে। সেই দেয়ালে আপনি গাঢ় কোন রং ব্যবহার করতে পারেন। ওই গাঢ় রঙের দেয়ালটি বাকি দেয়াল গুলোতে হালকা শেড ফেলবে, যা খুব সুন্দর দেখাবে।
৩. কম আলোর ঘরে হালকা রং ব্যবহার করুন। ঘরের সিলিংয়ের রং নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। সিলিংয়ে সাদা বা দেয়ালের রং থেকে আরো হালকা রং ব্যবহার করলে ঘর উজ্জ্বল দেখায়।
৪. শোবার ঘর বড় হলে এবং বেশি আসবাব না থাকলে বিস্কিট, নীল রং ব্যবহার করুন। ঘর ছোট হলে ক্রিম, গোলাপি, শ্যাওলা, সবুজ ইত্যাদি রং ব্যবহার করুন।
৫. বারান্দায় সাদা, ঘিয়ে বা অফ রং ব্যবহার করুন। যদি টবে গাছ থাকে তাহলে দেয়ালে সবুজ ব্যবহার করুন।
৬. ছোট শিশুদের ঘর গোলাপি, সবুজ, হলুদ, বেগুনি রং দিয়ে রাঙাতে পারেন। ঘরকে বাচ্চাদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করতে তুলতে দেয়ালের রঙের সঙ্গে কার্টুন, মাছ, গাছ, চাঁদ-তারা স্টিকার দিয়ে সাজাতে পারেন ।
0 Comments